এক মানুষ সম্পর্কে একটি সুসম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া উচিত। মানুষ কেবল দু’টো হাত বা দু’টো পা নয়। সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মেধা-হৃদয় মিলিয়ে যে মানুষ সেই কাজে যায়, আবার কাজ থেকে ঘরে ফিরে আসে। আমরা পারিবারিক সমস্যা কাজের জায়গায় নিয়ে যাই, আবার কাজের সমস্যা পরিবারের মধ্যে নিয়ে আসি। পারিবারিক সমস্যা মাথা নিয়ে কাজের জায়গায় গেলে কী হয়? মানসিক চাপ বেড়ে যায়, ফলে উৎপাদনে ঘাটতি পড়ে। অন্যদিকে কাজের সমস্যা ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যায় বিব্রত থাকলে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়ে।
যে উপাদানগুলি মনোভাব নির্ধারিত করে
আমরা কি আমাদের মনোভাব নিয়ে জন্মাই, কিংবা ীবনে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলি? কী কী উপাদান আমাদের মানসিকতা গঠন করে?
পারিপার্শ্বিক অবস্থার ফলেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠিত হয় এবং সেই দৃষ্টিভঙ্গি কি পরিবর্তন করা যায়? জীবনের গঠনশীল বছরগুলিতেই আমাদের মানসিকতা নির্দিষ্ট আকার নিতে শুরু করে।
প্রধানত তিনটি উপাদান আমাদের মনোভাব গঠন করতে সাহায্য করে। সে তিনটি হল :
১. পরিবেশ
২. অভিজ্ঞতা
৩. শিক্ষা
প্রত্যেকটিকে পৃথকভাবে মূল্যায়ন করা যাক -
১. পরিবেশ (Environment)
নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নিয়ে পরিবেশ তৈরি হয়:
- পরিবার: ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’রকম প্রভাব সৃষ্টি করে।
- শিক্ষাক্ষেত্র : সহপাঠীদের প্রভাব।
- কর্মক্ষেত্র : সহানুভূতিশীল ও সাহায্যকারী কর্মকর্তা কিংবা অতিরিক্ত সমালোচনাকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।
- সংবাদমাধ্যম : টেলিভিশন, খবরের কাগজ, সাময়িকপত্র, বেতার, সিনেমা।
- সাংস্কৃতিক পশ্চাদপট ও পরিমন্ডল।
- ধর্মীয় উত্তরাধিকার ও পরিমন্ডল।
- পরম্পরা ও সংস্কার।
- সামাজিক পরিবেশ।
- সমসাময়িক রাজনৈতিক চক্র।
এই সমস্ত একটি সাংস্কৃতিক অবস্থা সৃষ্টি করে। পরিবার, সংগঠন কিংবা স্বদেশ- প্রত্যেকটিরই একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক অবস্থা আছে।
নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, কোনও কোনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রেতা, তত্ত্বাবধায়ক, ম্যানেজার, মালিক সকলেই বেশ ভদ্র। আবার কোনও কোনও প্রতিষ্ঠানে দেখা যাবে প্রত্যেকেই ব্যবহার বেশ রূঢ় ও অভদ্রজনোচিত। একেকটি পরিবারে বাচ্চারা ও তাদের বাবা-মা ভদ্র, বিবেচক ও মার্জিত ব্যবহারে অভ্যস্ত; আবার অন্য পরিবারে একে অন্যের সঙ্গে বিশ্রীভাবে ঝগড়া করে।
যে সব দেশে রাজনৈতিক অবস্থা পরিচ্ছন্ন এবং সরকার সৎভাবে পরিচালিত হয়, সে সমস্ত দেশে সাধারণত জনসাধারণও সৎ, অপরকে সাহায্য করতে উৎসুক এবং আইন মেনে চলতে অভ্যস্ত। এর উল্টোটাও ঠিক। অর্থাৎ যেখানে সরকার অসৎ সেখানে একজন সৎ ব্যক্তি বিপদের সম্মুখীন হন। আবার যেখানে অবস্থা সৎ ও পরিচ্ছন্ন সেখানে একজন ভ্রষ্টাচারী অসুবিধার সম্মুখীন হন। যেখানে একটি ইতিবাচক কাজের আবহাওয়া আছে সেখানে নেতিবাচক অবস্থা তৈরী করতে একজন দক্ষ অসৎ ব্যক্তির দক্ষতা কম ফলপ্রসু হয়।
যে কোন সংস্থার কর্মধারার আদর্শ উপর থেকে সরে যায়, মাঝে মাঝে সংস্থার কর্মকর্তাদের পিছন ফিরে তাকিয়ে বিচার করার প্রয়োজন যে তারা সহকর্মীদের জন্য কী ধরনের কাজের আবহাওয়া সৃষ্টি করেছেন। একটি নেতিবাচক অবস্থার মধ্যে ইতিবাচক কর্মোদ্যম সৃষ্টি করা দু:সাধ্য। যেখানে আইন না মেনে চলাই নিয়ম হয়ে গেছে সেখানে সৎ নাগরিক যে ঠগ, জোচ্চর ও চোর হয়ে উঠবে, তাতে আশ্চর্য্য কী? যে অবস্থা / পরিবেশের মধ্যে আমরা বাস করি বা যা আমরা অন্যদের জন্য তৈরী করেছি তারও মূল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তা আছে।
২. অভিজ্ঞতা (Experience)
জীবনে নানা ঘটনার অভিঘাতে এবং নানান মানুষের সঙ্গে মেশার অভিজ্ঞতায় আমাদের ব্যবহারেও পরিবর্তন ঘটে। যদি কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে আমাদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হয় তবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও হবে ইতিবাচক, আবার অভিজ্ঞতা নেতিবাচক হলে দৃষ্টিভঙ্গিও হবে নেতিবাচক।
৩. শিক্ষা (Education)
এখানে প্রথানুযায়ী শিক্ষা এবং স্কুল-কলেজের বাইরে হাতে কলমে শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে; কেবলমাত্র ডিগ্রির কথা নয়। জ্ঞানকে পরিকল্পনামাফিক ও অভিজ্ঞতার নিরিখে প্রয়োগ করলে তা হয় বিজ্ঞতা। বিজ্ঞতা সাফল্য নিশ্চিত করে। ব্যাপক অর্থে শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে। এই শিক্ষায় শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। একজন প্রকৃত শিক্ষকের প্রভাব চিরন্তন। বৃহৎ তরঙ্গ থেকে অজস্র ক্ষুদ্র তরঙ্গভঙ্গের মতো, তার প্রভাব সদাবিস্তৃ এবং বস্ততপক্ষে অপরিমেয়। আমরা তথ্যের ভাবের আকণ্ঠ নিমজ্জিত, কিন্তু জ্ঞান ও বিজ্ঞতার অভাবে তৃষ্ণার্ত। শিক্ষা কেবল জীবিকা অর্জনের পথ নির্দেশ করে না, কিভাবে জীবনযাপন করতে হয় তারও শিক্ষা দেয়।
২য় পর্ব পড়ুন একটি সুসম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি - ২য় পর্ব









