একটি সুসম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি - A holistic approach : ৩য় পর্ব
বয়স্ক ব্যক্তিরা নিজেরাই ইতিবাচক মনোভাব গঠন করতে পারেন। এ দায় নিজেদেরই নিতে হবে। অনেক সময় ব্যর্থতার জন্য আমরা অপরকে বা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঘটনাকে দায়ী করি। কিন্তু এরূপ না করে একটি বিশ্লেষণধর্মী ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী করা দরকার। প্রত্যেকদিন সকালে আমাদের মনোভাবটি তৈরি করে নেওয়া সম্ভব। বয়স্ক ব্যক্তি হিসাবে আমাদের কাজের ও ব্যবহারের দায়িত্ব আমাদেরও নেওয়া উচিত।
১ম পর্বে পড়েন নি?? পড়ুন একটি সুসম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি - ১ম পর্ব
২য় পর্বে পড়েন নি?? পড়ুন একটি সুসম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি - ২য় পর্ব
নেতিবাচক মনোভাবের ব্যক্তিরা তাদের ব্যর্থতার জন্য অন্যকে দোষেন, তাদের মাতাপিতা, স্ত্রী, শিক্ষক, দেশের সরকার, অর্থনীতিকেও দোষারোপ করেন। মনকে অতীতের বন্ধন থেকে মুক্তি দিতে হবে। পুরোনো ধুলো ঝেড়ে ফেলে জীবনের মূলধারায় প্রত্যাবর্তন দরকার। সব স্বপ্নকে সংহত করে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে। যেগুলি সৎ, সত্য এবং মহৎ, সেই সমস্ত ইতিবাচক বিষয়গুলি সম্পর্কে চিন্তা করতে করতেই মনের ইতিবাচক দিকটি সমৃদ্ধ হবে। যদি আমরা এই ধরনের মানসিকতা গঠন করতে চাই এবং তা স্থায়ী করতে চাই তবে সচেতনভাবে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুশীলন করা দরকার:
প্রথম পদ্ধতি : লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন করে ইতিবাচক গুণের খোঁজ করা (Change focus, look for the positive) জীবনের সমস্ত ইতিবাচক বিষয়ের প্রতিই নজর দেওয়া দরকার। কোনও ব্যক্তির জীবনে কিংবা কোনও বিশেষ অবস্থায় যে উপাদান ও গুণগুলি কল্যানকর সেগুলির প্রতিই নজর দেওয়া উচিত। নেতিবাচক মানসিকতা কেবলমাত্র ত্রুটিগুলি দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে যায়, ফলে দোষগুলিই দেখা হয়, কল্যানকর দিকটি নজরে আসে না।
দোষ দেখাই যাদের স্বাভাব তারা স্বর্গেরও ক্রটি বের করতে পারেন। বেশিরভাগ মানুষই যা দেখতে ইচ্ছা করেন তাই বড় করে দেখেন। যদি তারা মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব, আনন্দ এবং অন্যান্য ইতিবাচক গুণাবলীর খোঁজ করেন তবে তাই পাবেন; আর যদি তাদের মধ্যে বিসম্বাদ বা ঐদাসীন্য দেখতে চান তবে তাও পাবেন। মানুষের মধ্যে ভালোমন্দ দুই০ই আছে। তাই স্মরণ রাখা দরকার যে ইতিবাচক গুণগুলি খোঁজ করা ব প্রাধান্য দেওয়ার অর্থ এই নয় যে ত্রুটিগুলিকে অগ্রাহ্য করা।
সোনার খোঁজে (Looking for the gold) এ্যান্ড্রু কার্নেগী নামে একজন স্কট বাল্যবয়সে আমেরিকায় এসে নানা ধরনের খুচরো কাজ করতে শুরু করেন। তিনি জীবন শেষ করেন আমেরিকার একজন বৃহত্তম ইস্পাত প্রস্তুতকারী হিসেবে। একসময়ে ৪৩জন বিপুল ঐশ্বর্য্য হিসেবে বিবেচিত হোত, আজও তা কিছু কম ঐশ্বর্য্য নয়। জনৈক ব্যক্তি একদিন কার্নেগীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি কিবাবে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করেন। এ্যান্ড্রু কার্নেগী জবাব দিলেন, “মানুষ নিয়ে কারবার করা যেন সোনার জন্য মাটি খোঁড়ার মত। এক আউন্স সোনার জন্য টনের পর টন মাটি কাটতে ও সরাতে হয়। কিন্তু সোনাই খোজা হয়, মাটি নয়।”
আসল কথা, আমাদের নজর কোনটার উপর। নজরটা সোনার উপর থাকুক মাটির উপর নয়। মানুষের মধ্যেও যদি দোষত্রুটি খোঁজ হয়, তবে মাটির মতো, তা অনেক পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কী খুঁজছেন? এ্যান্ড্র কার্নেগীর জবাবের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। সব অবস্থাতেই প্রত্যেক মানুষের মধ্যে কিছু ইতিবাচক দিক আছে। অনেক সময় হয়ত গভীর অনুসন্ধান করে ইতিবাচক গুণাবলীর সন্ধান করতে হয়; কারণ তা সহজে নজের আসে না। তাছাড়া, আমরা অন্য মানুষের ত্রুটি দেখতে এত অভ্যস্ত যে ভালো দিকটি সাধারণ আমাদের নজরে আসে না। সব মানুষেরই কিছু ইতিবাচক দিক আছে, এই কথার দৃষ্টান্ত হিসাবে একজন বলেছিলেন যে একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া ঘড়িও দিনে দু’বার সঠিক সময় দেখিয়ে থাকে। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, যখন আপনি সোনার খোঁজ করেন তখন এক আউন্স সোনার জন্য আপনাকে টন টন মাটি সরাতে হয়; কিন্তু আপনি খোঁজেন সোনাই, মাটি নয়।
“নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ সব সময়েই সমালোচনা করবে”
কিছু লোক আছেন যারা পক্ষ-বিপক্ষ বিচার না করে সব সময়েই সমালোচনা করেন। সমালোচনাই তাদের জীবিকা। সমালোচনা তাদের জীবন। তারা প্রায় বিজয়ীর লক্ষ্য ও একাগ্রতা নিয়ে সমালোচনা করেন। প্রতিটি মানুষের মধ্যে প্রত্যেক অবস্থায় তারা কিছু ত্রুটি খুঁজে বার করবেনই, এবং বিশ্বসুদ্ধ সবাইকে ত্রুটির জন্য দোষারোপ করবেন। এই ধরনের মানুষকে বলা যায় ‘শক্তিশোষক’- তারা সমস্ত শক্তি শোষণ করে নেন। এরা কাফেটোরিয়াতে গিয়ে ক্লান্তি অপসারণের নামে বিশ কাপ চা-কফি গলাধঃকরণ করেন, মনের সুখে ধূমপান করেন এবং অজস্র নিন্দামন্দ করেন। তারা শুধু নিজেদেরই মধ্যেই নয়; আশেপাশে যারা থাকেন সবার মধ্যেই একটা চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি করেন। প্রকৃতপক্ষে, ছোঁয়াচে রোগের ন্যায় তারা একটি নঞর্থক বাণী বহন করেন এবং এমন একটি পরিবেশের সৃষ্টি করেন যেখানে কেবল নেতিবাচক ফলই পাওয়া যায়।
রবার্ট ফুলটন বাষ্পীয় পোত আবিষ্কার করেছিলেন। হাডসন নদীতে যখন তিনি তার নুতন আবিষ্কার প্রদর্শনের আয়োজন করছিলেন তখন কিছু নিরাশবাদী ও সংশয়ী ব্যক্তি জড়ো হয়ে বলাবলি করছিল যে জাহাজ কখনও চলবে না। দেখা গেল জাহাজ চলছে এবং সেটি নদী দিয়ে এগিয়ে গেল। তখন যারা জাহাজ চলবে না বলে মন্তব্য করেছিল তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, জাহাজ কখনও থামবে না। সবকিছুর নেতিবাচক দিক দেখার কী আশর্য মানসিকতা!
চলবে পরবর্তী পর্বগুলোতে বাকি পদ্ধতিগুলো প্রকাশ করা হবে।
চলবে পরবর্তী পর্বগুলোতে বাকি পদ্ধতিগুলো প্রকাশ করা হবে।



0 Comments